Sunday, October 12, 2025
HomeHEALTH & FITNESSআক্কেল দাঁত কখন উঠে, দাঁত ব্যথা হলে করণীয় ও দাঁত সাদা করার...

আক্কেল দাঁত কখন উঠে, দাঁত ব্যথা হলে করণীয় ও দাঁত সাদা করার উপায় কী?

আক্কেল দাঁত: দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝা এক কথাতেই বোঝা যায়, যে দাঁতের গুরুত্ব কতটা। কিন্তু আপনি জানেন কি শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? আর আঁকাবাঁকা বা হলদে দাগ থেকে মুক্তির উপায় কি? ছাই, লবণ, মেসওয়াক কোনটা দাঁতের জন্য উপকারী? আর আক্কেল দাঁত ওঠার সময় কেন এত ব্যথা হয়?  দাঁত নিয়ে এমন নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে সঙ্গেই থাকুন।

নিয়মিত দাত ব্রাশঃ

দাঁতের যত্ন মানেই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা।  কিন্তু দিনে কয় বেলা এবং কখন ব্রাস করা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ মোঃ আব্দুল মুত্তালিব মালিক।তিনি বলেছেন, দিনে দুইবার ব্রাশ করতে হবে এবং সেটা প্রতিদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে, আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।  দাঁত ব্রাশ এর কাজটি তিনি দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন।  এমনভাবে ব্রাশ করতে হবে যেন দাঁতের প্রতিটি কোনা পরিস্কার হয়।  দাঁত ব্রাশ এর ক্ষেত্রে সঠিক টুথ ব্রাশ টাও বেছে নেয়াটা জরুরী।  এজন্য ভালো মানের নরম প্রেসলে টুথব্রাশ নেবেন।

শক্ত ব্রেসেলের  ব্রাশের ফলে  আপনার দাঁত ও মাড়ির স্থায়ী সমস্যা হতে পারে। আরেকটি বিষয় কোন টুথ ব্রাশ তিন মাসের বেশি ব্যবহার করবেন না।  তবে তিন মাসের আগেই যদি ব্রেসপলস খুয়ে  যায় তাহলে সেটা সাথে সাথেই বদলাতে হবে। প্রতিবার ব্রাশ করার পর ব্রাশ এর মুখ ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখবেন এবং ব্যবহারের আগে ও পরে ভালোভাবে  ধুয়ে নিবেন।এখন বলতে পারেন টুথপেস্ট কোনটা বেছে নেবেন? এ ব্যাপারে দন্তচিকিৎসক মিস্টার মুত্তালিব বলেছেন, বাজারের যেকোন টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারে। তবে চেষ্টা করুন একই পেস্ট ব্যবহার না করে বিভিন্ন ধরনের পেস্ট অদলবদল করে ব্যবহার করতে। যেমন এই মাসে কোন সাদা পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে  তো পরের মাসে ব্যবহার করুন জেল এর পরের মাসে হারবাল বা আয়ুর্বেদিক কোন পেস্ট।

ছাই,লবণ, মেসওয়াক নাকি মাজন?

 যদি টুথ ব্রাশ পেস্ট না থাকে তাহলে দাঁতন বা মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলো দিয়ে পেছনের দিকে দাঁতগুলো ঠিক ভাবে পরিষ্কার করা যায় না। তাই  টুথব্রাশ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অনেকে দাঁত পরিষ্কার করতে মাজন, লবণ, কয়লা, মাটি ব্যবহার করেন। এতে দাঁত শুরুতে অনেক ঝকঝকে সাদা মনে হয় ঠিকই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর প্রভাবে দাঁতের এনামেল ক্ষয় যায়। এনামেল দাঁতের  ওপরে শক্ত আবরণ।এগুলো ক্ষয়ে গেলে দাত হলুদ এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে  ২বেলা ব্রাশ করার পাশাপাশি,, প্রতিবার খাওয়ার পর লবণ-পানি দিয়ে বা মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডক্টর মোতালেব।  এছাড়া দাঁতের কোনায় খাবার আটকালে ফ্লস করতে বলেছেন তিনি। তবে টুথপিকের মত খোঁচালো জিনিস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। 

আক্কেল দাঁত কি?

অনেকে একটু বড় হলেই বলেন, তার আক্কেল হয়েছে,এ  আক্কেল বলতে বোঝায় মুখের একদম শেষমাথায় ওপরে ও নিচে দুই পাশে মোট চারটি দাঁতকে। সাধারণত 18 থেকে 25 বছরের মধ্যে যেকোনো বয়সেই আক্কেল দাঁত উঠতে পারে। মুখে 32 টি দাঁত ধরার জায়গা না থাকলে আক্কেল দাঁত ওঠার সময় অস্বচ্ছ রকম ব্যথা হয়। কারণ দাঁত বেরিয়ে আসার কোন জায়গা পায়না। অনেক সময় অপারেশন করে ওই দাঁতের জন্য জায়গা করে দিতে হয়। কিন্তু আক্কেল দাঁত ওঠা মানেই যে আপনার আক্কেল হয়েছে সেটা কিন্তু বলা যাবেনা। 

হলুদ দাঁত  ঝকঝকে করবেন

দাঁতের রং হলদে হয়ে গেলে, বা ছপছোপ দাগ পড়লে স্কেলিং ও পলিশিং এই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে দাঁত ঝকঝকে করে নেয়া যায়। আবার অনেক সময় ব্লিচিং করে ও রং ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে ডক্টর মুত্তালিব জানিয়েছেন।  দাতে ক্যাভিটি বা গর্ত সৃষ্টি হলে ফিটিং করা হয়। তবে এ গর্ত যদি মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন রুট ক্যানেল করতে হব।

আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করার উপায়ঃ

আক্কেল দাঁত

 আবার যাদের দাঁত  আঁকাবাঁকা বা গঠনের ত্রুটি আছে, তাদের দাঁতের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব দাঁতের গঠন ঠিক করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ড. মোত্তালিব  মালিকের পরামর্শ দাঁতের কোন সমস্যা থাক বা না থাক, ছয় মাস পর পর দাঁত বিশেষজ্ঞের কাছে দাতটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। দীর্ঘদিন দাঁতে সমস্যা পুষে রাখলে সে থেকে মুখের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

জিহ্বা পরিষ্কারঃ

দাঁত পরিষ্কারের সময় জিহ্বা পরিষ্কার করাও বেশ জরুরি। এ ক্ষেত্রে আঙুল দিয়ে ঘষে অথবা টান স্ক্রাবার দিয়ে অথবা ব্রাশ এর উল্টো দিক দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।

চকলেট খেলে কি দাঁত পড়ে যায়?

 চকলেট খেতে কে না পছন্দ করে? কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অতিরিক্ত চকলেট দাঁতের জন্য অনেক ক্ষতিকর। শুধু চকলেটি না আমাদের সবার প্রিয় বার্গার, পিৎজা চিপস, বিস্কিত, চা-কফি, চুইংগাম এসব খাবারই দাঁতের জন্য অনেক খারাপ। কারণ এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট এবং অতিরিক্ত চিনি দাতকে ক্ষয়  করে ফেলে। যদি খেতেই হয় তাহলে খাবার পরপরই পানি বা মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলবেন। না হলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে এসব খাবার জমে থেকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জন্মাবে। সেখানথেকে ক্যাভিটি বা গর্তের সৃষ্টি হবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে । ফলে অনেক ঠান্ডা, গরম বা টক কিছু খেলেই দাঁত  শিরশির করবে।

ধূমপান, চুন, গুল, পান?

 দাঁতের জন্য সবচেয়ে খারাপ হলেো ধূমপান, জর্দা চুন,গুল, পান।  কারন এগুলো থেকে দাঁতের ক্ষত হয়, তার সাথে সাথেই মুখের ক্ষত এমনকি মুখের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের অনেকের অভ্যাস মাংস খাবার পর আয়েশ করে শক্ত শক্ত হাড় চাবানো। তারপর দাঁত দিয়ে আখ ছিলে খাওয়ার।  আবার অনেকেই আছে কোন কিছুতে গিট বেঁধে গেলে,  সেটা খুলতে দাঁত  ব্যবহার করেন। কিংবা কোথাও সুতো বা দড়ি ছিড়তে গেলে দাঁত ব্যবহার করেন। কেউ কেউ ঘুমের ঘোরে দাতে দাঁত  ঘষেন। এসব অভ্যাস দাঁতকে দুর্বল করে দিতে পারে।

তাহলে কি খাব?

 দাঁত সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি,  ডি যুক্ত খাবার এবং আঁশযুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে। দুধ, ডিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার দাঁতের জন্য ভালো। এছাড়া প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে ভুলবেন না। 

শিশুর দুধ দাঁতের  যত্নঃ

দাঁতের যত্ন শুরু করতে হবে একদম শিশু বয়স থেকে  আর সেই দায়িত্ব মা-বাবা বা অভিভাবকের  । সাধারণত 6 মাস বয়সের পর থেকে শিশুর দুধ দাঁত ওঠার শুরু হয়। এ সময় শিশু প্রতিবার দুধ খাওয়ার পর পানি খাইয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দন্ত বিশেষজ্ঞরা  যেসব শিশু দুধ খেতে খেতে ঘুমায়, তাদের মাথার কাছে পানি ফিডার রাখবেন। পানি খাওয়ালে শিশুর মুখে থাকা দুধ ধুয়ে যায়। দিনে কয়েকবার লবণ পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শিশুর দাঁত মুছে দেওয়া যেতে পারে। শিশু যখন বুঝতে শিখে সাধারণত দুই বছর বয়স থেকেই তাকে নিজ হাতে দাঁত ব্রাশ করার প্রশিক্ষণ দেবেন।

প্রথমে টুথপেস্ট ছাড়া দাঁত মাজার নিয়োগ শেখাতে হবে। বোঝাতে হবে যেন সে পেস্ট খেয়ে না ফেলে। শিশুদেরকে চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টি, শর্করা জাতীয় খাবার যত কম খাওয়ানো যায়, ততই দাঁতের জন্য ভালো। কারণ এসব খাবার দাঁতের গায়ে লেগে থেকে শিশুর দাঁত ক্ষয় করে ফেলতে পারে। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকে। দাঁতের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল, এ ব্যয় অনেকটাই নির্ভর করে আপনি দাঁতের সমস্যার কোন পর্যায়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন তার উপর। তাই আজ থেকেই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিন।

 এমন নানা কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গেই থাকুন। আক্কেল দাঁত

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments