আপনি কি জানেন, তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের হার বাড়ছে? আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির গবেষণাসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার হার বাড়ছে এবং এত দ্রুত গতিতে এরা হচ্ছে যে, বিজ্ঞানীরাও বিস্মিত হয়ে পড়েছেন।
কোলন ক্যান্সার কি? ঠিক কি কারণে কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকে? কীভাবে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব তা জানতে পারবেন আমাদের আজকের এই আলোচনায়।
কোলন ক্যান্সার কি?
এটা এক ধরনের ক্যান্সার, যা দেহের বৃহদন্ত্রের অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয়। এটা মলাশয়ের ক্যান্সার বা বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার নামেও পরিচিত। আমাদের শরীরের পরিপাক তন্ত্র, সেই পরিপাকতন্ত্রের যে সর্বশেষ অংশটা সেই অংশটা কে আমরা বলি কোলন, বাংলায় বলি বৃহদন্ত্র। এবং কোলন এর পরে একটা সোজা মলদ্বারের জাস্ট একটু পরে যেটাকে আমরা বলি মলাশয়। এই জায়গায় নানান ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং ক্ষতিকারক ধরনের টিউমার হতে পারে, আবার ভিতরের দিকে আবরণী কোষ থাকে, যাকে আবরণী কোষ বলে থাকি আমরা। কোষগুলির মধ্যে কিছু পরিবর্তন হতে পারে ওই পরিবর্তন হলে প্রথমে পলিপের মতো, একটু ফুলকপির মত এই রকম হতে পারে। যেগুলি পরবর্তীতে খারাপ দিকে যেতে পারে, যেমন রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হয় হতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে যত রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় হয়, তার মধ্যে আক্রান্তের হিসেবে তৃতীয় বৃহত্তম হল কোলোরেক্টাল ক্যানসার।
বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের চিত্রঃ

বাংলাদেশে কি পরিমাণ মানুষের মধ্যে এই ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের 2014 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৯. ২ ভাগ পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কোলন ক্যান্সারের কারণঃ
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হলো:
গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
১. বয়সঃ বয়স 50 পেরোলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, এই ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি 10 জনের 9 জনের বয়সী ৭ বা তার চেয়ে বেশি। যদিও এখন তরুণদের মধ্যেও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে।
২.খাদ্যাভ্যাসঃ অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
৩. ওজনঃ অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৪. ব্যায়ামঃ
যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে, এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ।
৫. মদ্যপান ও ধূমপানঃ
মদ্যপান ও ধূমপান এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬.পারিবারিক ইতিহাসঃ
পরিবারের কোন সদস্যের, যেমন, বাবা-মা বা ভাই বোনের যদি পঞ্চাশের কম বয়সে কোন ক্যান্সার হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহ জনিত রোগ, কোলন পলিপ থাকে ও কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক এছাড়া মলত্যাগের জন্য হাই কমোড ব্যবহার করা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে,এমন তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণঃ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন। তবে এই ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি, সেগুলো হলোঃ
১. মলের সাথে নিয়মিত রক্ত নির্গত হওয়া, মলের সাথে রক্ত নির্গত হয় সাধারণত পাকস্থলীর কার্যক্রমে পরিবর্তন হলে।
২.পাকস্থলীর কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন, এরকম সময়ে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মল ত্যাগ করে এবং অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে।
৩.তলপেটের ক্রমাগত ব্যথা, পেট ফোলা বা অস্বস্তি বোধ করা এই উপসর্গের সাথে সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন খাবার রুচি হারানো বা ওজন হারানোর বিষয়গুলো দেখা যায়। এছাড়া ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য মলত্যাগ করার পরও বারবার ইচ্ছা হওয়া বা রক্তের আয়রনের স্বল্পতার মতো উপসর্গ দেখা যায় এই ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে।
কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় যেভাবেঃ
কোলন ক্যান্সার নির্ণয়ের কয়েকটি ধাপ আছে, তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, 45 বছর বয়স থেকেই নিয়মিত চেকআপ করানে উচিত। বিশেষ করে যারা ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে আছেন তারা। কোলন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য কয় ধরনের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
প্রতিবছর ফিকাল ইমিউনোকেমিক্যাল টেস্ট বা এফআইটি করাণ। ফিকাল ব্লাড টেস্ট বা (gFOBT) এ করতে হবে প্রতি বছর। তিন বছরে একবার multi-target স্কুল ডিএনএ টেস্ট পরীক্ষা করা। প্রতিটি ১০বছরে একবার কোরাস কপি করা। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিগময়ডোস্কোপি করানো।
এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাফি,সিটিস্ক্যান,এমআরআই এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ক্যান্সার সনাক্ত করা না গেলেও ক্যান্সারের উৎস, কেন্দ্রস্থল, আকৃতি ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
একজন রোগীর মধ্যে কি ধরনের উপসর্গ আছে, তার উপরেই নির্ভর করে ডাক্তার পরামর্শ দেবেন, রোগের কোন ধরনের টেস্ট প্রয়োজন। এই ক্যান্সারের বিভিন্ন স্টেজ আছে, ক্যান্সারটি কোন স্টেজে আছে, তার উপরে নির্ভর করে এর চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়।
সার্জারিঃ
সার্জারি কোলন ক্যান্সারের জন্য খুবই প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীদের ক্ষেত্রে সার্জারি পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
১.রেডিওথেরাপি,
২.কেমোথেরাপি,
৩.বায়োলজিক্যাল,
৪. ইমিউনোথেরাপি।
আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীর যত্ন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারনত
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে সার্জারি করাতে হয়, পলের অপসারণের জন্য। আর সার্জারির পর রোগীর পোষাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। রোগীকে হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পড়াতে হবে। আর গোসল করাতে হবে ক্ষত সেরে যাবার পর। সব-সময় রোগীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন কোন ধরনের ইনফেকশন না হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়াম রোগীর শরীর স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মান বিভিন্ন রকমের এবং ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে কত আগে ধরা পড়ল তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে রোগীর সুস্থ হবার হার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওজন পরিমিত রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় 45 শতাংশ কমে যায়। কাজেই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।