Sunday, October 12, 2025
HomeHEALTH & FITNESSনিউমোনিয়া: কেন হয়, লক্ষণ কী, আর হলে কী করবেন?

নিউমোনিয়া: কেন হয়, লক্ষণ কী, আর হলে কী করবেন?

বাংলাদেশ প্রতিদিন কমপক্ষে 67 জন শিশু মারা যায় শুধুমাত্র নিউমোনিয়ার কারণে, এমনটা বলছে আইসিডিডিআরবির সর্বশেষ গবেষণা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের কারণে শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই রোগ, তাই এক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কি কি ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে?

নিউমোনিয়া হচ্ছে শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ, যা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একাধিক ধরনের সংক্রামক জীবাণুর আক্রমণে এই রোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গী বা ফাংগাস। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর শাকিল আহমেদ বলেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও টিভি রোগের জীবাণুর কারণে এই রোগ হয়। এদের মধ্যে যেগুলো বেশি দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে স্ট্রেপটোকক্কাস এই রোগ। শিশুদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই রোগ হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় স্ট্রেপটোকক্কাস এই রোগ। নিউমোনিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। রেসিডেন্সিয়াল ভাইরাসের আক্রমণে ভাইরাল এই রোগ হয়।  এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোসিস্টিস জিরোভিসি কারণে সবচেয়ে বেশি এই রোগ হয়ে থাকে। 

নিউমোনিয়ার কারণ ও ঝুঁকিগুলো কি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের এই রোগর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি.। পুষ্টিহীনতার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।  এছাড়া যেসব শিশুর জন্মের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে একেবারেই মায়ের বুকের দুধ পায়না তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কম থাকে। এছাড়া অপহৃত শিশুর জন্মহার বেশি হওয়ায় এদের মধ্যে এই রোগ হওয়া এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হার বেশি। এদিকে আগে থেকে থাকা স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন এইচআইভি বা হাম উঠলে তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেমন ঘরের ভিতরে জ্বালানী, কাঠ, খরকুটর ধোয়া, ঘরের মধ্যে অনেক বেশি মানুষ বাস করে বাবা মায়ের ধূমপানের কারণে ও শিশুর এই রোগর ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকরা বলছেন। 

নিউমেনিয়ার লক্ষণগুলো কি?

গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে যে এই রোগ হয় সেগুলোর উপসর্গ একই রকমের। তবে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার তুলনায় ভাইরাল নিউমোনিয়ার উপসর্গ কিছুটা বেশি থাকে। ভাইরাস সংক্রমণ হলে শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হয়। মারাত্মকভাবে এই রোগ আক্রান্ত ও নবজাতকদের অনেক সময় খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জ্ঞান হারানো, খিঁচুনি,  শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক শাকিল আহমেদ বলেন, ২ মাস বা এর কম বয়সী শিশু শান্ত ভাবে শুয়ে থাকার সময় তার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি যদি মিনিটে 60 এর বেশি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে যে তার এই রোগ হয়েছে ।

দুই মাস থেকে 1 বছর বয়সী শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের উঠানামা যদি 50 বারের বেশি হয় এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুর এই মাত্রা যদি 40 হাজারের বেশি থাকে তাহলে শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এছাড়া শিশুর যদি পাঁজর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায় বা শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ফুলে ওঠার পরিবর্তে যদি ভেতরে ঢুকে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে সেটি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। শিশুর নেতিয়ে পড়া লক্ষণ থাকে।  পালস অক্সিমিটার শিশুদের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা যদি 92 বা তার নিচে নেমে যায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।  এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নিউমোনিয়া হলে কি করবেন?

 চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ার চিকিৎসা  সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে মাঝারি বা মারাত্মক ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়। এ সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক দেয়া বা অক্সিজেন দেওয়ার দরকার হতে পারে। 

নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে করণীয়ঃ

শিশু মৃত্যুর হার কমানোর জন্য এই রোগ প্রতিরোধ করারটা অত্যন্ত জরুরী। এইচআইভি এবং হুপিংকাশি প্রতিরোধ করতে হবে। শিশুদের এই রোগ প্রতিরোধক টিকা সহ অন্যান্য রোগের টিকা সঠিক সময় দিতে হবে। শিশুদের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করতে হলে পর্যাপ্ত পুষ্টি সম্পন্ন খাবার দিতে হবে। নবজাতকদের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ মায়ের বুকের দুধ শিশুর অসুস্থ তার বিরুদ্ধে প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। ঘরের ভেতরে বাতাস যাতে বিশুদ্ধ হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন ঘরের ভেতর ধূমপান করা যাবেনা। ঘরের ভেতরে লাকড়ির চুলা থেকে ধোঁয়া তৈরি করা যাবে না। এবং তা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাসায় বেশি অতিরিক্ত সদস্য থাকলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। এটি এই রোগর ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে।

শীতকালে শিশুদের আর কী কী ধরনের শ্বাসকষ্ট হয়?

 ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক শাকিল আহমেদ বলেন, শীতকালে মৌসুম শুষ্ক হওয়ার কারণে ধুলোবালি বারে, ঘরের ভেতর মানুষ বেশি থাকে ঘরের ভেতরটা একটু সঁ্যাতস্যাতে থাকে। এমন পরিবেশের কারণে শিশুদের এলার্জি জনিত শ্বাসকষ্ট বেশি হয়। এটা দুই ধরনের হয় নাকের উপরের অংশের এলার্জি এবং ফুসফুসের এলার্জির।ফুসফুসের এলার্জি এ্যাজমা বলা হয়।। যা শীতকালে বেড়ে যায়।  এছাড়া শীতকালে বাংলাদেশ কখনো কখনো ব্রঙ্কাইটিস জনিত একটা ভাইরাসজনিত রোগ বেড়ে যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments