হজমশক্তি কে আমরা শক্তিশালী করতে পারি? এ প্রশ্নের উত্তরে পুষ্টিবিদরা বলছেন যে হজম শক্তি বাড়ানোর বা শক্তিশালী করার বিষয়টি একটু জটিল। কারণ সব মানুষের হজমশক্তি এক ধরনের হয় না। একই ধরনের খাবার অনেকে হজম করতে পারেন, আবার অনেকে পারেন না। হজম শক্তি কিভাবে বাড়ানো যায় সেটি জানার আগে প্রশ্ন আসে যে হজমশক্তি আসলে কি এবং কেনই বা বাড়াতে হবে অর্থাৎ এটি আসলে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
হজমশক্তি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সুস্বাস্থ্যের জন্য হজমশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাধাগ্রস্ত হলে বা কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পুরো দেহই স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ শারমিন আক্তার বলেন, শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন না হলে, তা পুরো দেহ কে প্রভাবিত করে। এর কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া লিপিড প্রোফাইল, ইউরিক এসিড কিংবা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পুষ্টিবিদ চৌধুরী তাসনিম হাসিন বলেন,
হজম প্রক্রিয়ার তিনটি ধাপ থাকে। এগুলো হচ্ছে খাবার খাওয়া সেটা পরিপূর্ণভাবে হজম হওয়া এবং হজমের পর সেটা দেখে শোষিত হওয়ার। এ তিনটি ধাপে দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, হজম সম্পর্কিত সমস্যা বলতে শুধু গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া কিংবা শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য কে বোঝায় না। বরং হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি, স্থূলতা বৃদ্ধের মত সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, খাবার খেলেও শরীর শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না।
হজমশক্তি বাড়ানো যায় কিভাবে?
একেক মানুষের মেটাবলিজম বা হজমশক্তি একেক রকমের হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, একই রকমের খাবার খেয়েও একজন মোটা হয়, কিন্তু আরেকজন হয় না। যারা হোস্টেলে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় বলে জানান পুষ্টিবিদরা।
১. পর্যবেক্ষণঃ
কোন খাবারটি খেলে আপনার সমস্যা হচ্ছে, সেটি খেয়াল করুন। পুষ্টিবিদ ড. তাসনিম হাসিন পাপিয়া জানান, আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ বোঝেই না যে কোন খাবারে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এজন্য তারা ধীরে ধীরে প্রায় সব ধরনের খাবার বাদ দিতে থাকে। যেমন তেলে ভাজা খাবার, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, টক খাবার ইত্যাদি। যেমন অনেকের দুধ হজম করতে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার একেবারে বাদ না দিয়ে, ধীরে ধীরে সেটা সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
কারণ দুধ হজমের দরকারি ল্যাকটেজ নামে এক ধরনের এনজাইম শরীরে নিঃসরণ হওয়া যদি বন্ধ হয়ে যায়, তা আবার নিঃসরণ শুরু করা সম্ভব। আর এজন্যই কোন খাবারে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বা সমস্যা হচ্ছে সেটা জানাটা জরুরী। এছাড়া অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবে ও হজমশক্তি দুর্বল হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিলে তার শক্তিশালী করা সম্ভব।
২. শারীরিক ব্যায়ামঃ

সব ধরনের শারীরিক ব্যায়াম হজমশক্তিকে বাড়ায় না বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। মেটাবলিজম শক্তি সাথে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ মানুষের কোমরে বা ডায়াফেমের উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত থাকে বলে জানান তারা। তাদের মধ্যে যেসব ব্যায়ামের শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড যত ভালো হবে, হজম প্রক্রিয়া তত সুন্দর হবে। চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে রিভলভিং চেয়ার ব্যবহার করলে শরীরের নড়াচড়া টা সহজ হয়।
গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
একসাথে বসার ক্ষেত্রে যদি টুইস্টিং পদ্ধতি অর্থাৎ শরীরের উপরের দিকে অংশ একদিকে এবং নিচের দিকের অংশ আরেক দিকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। এছাড়া কিছু ব্যায়াম শুরু করা যায়। যেমন শুয়ে 90 ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে দুই পা উঁচু করে রাখতে হবে এবং পা দুটি চক্রাকারে অর্থাৎ ডান থেকে বামে এবং বাম থেকে ডানে ঘোরাতে হবে। এটা খুব ভালো কাজ করে। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি জগিং করা যায় বা হালকা করে লাফানো যায় এ ধরনের ব্যায়াম ও খুবই উপকারী।
৩. খাবারঃ

হজমশক্তি সবল করতে হলে খাবারের প্রকারটা বুঝতে হবে। যেমন খাবারের যদি স্বাদ থাকে, তাহলে সেটি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। আবার মাংস জাতীয় কিছু খেলে তার সাথে যাতে লেবু থাকে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিবার খাওয়া শেষ করে অল্প পরিমাণ লেবু পানি খেলে সেটি হজমের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। খাবার খাওয়া শুরু করার আগেই জিহ্বাতে অল্প লবণ স্পর্শ করিয়ে খাবার খেলে সেটিও হজমে সাহায্য করে। এছাড়া গাচ ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে সেগুলো বেশি খাওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিকভাবেই এ ব্যাকটেরিয়ার সবচেয়ে ভালো হচ্ছে দই। ড.তাসনিম হাসিন পাপিয়া বলেন, যাদের হজমে সমস্যা হয়, তাদের জন্য ইয়োগার্ট থেরাপি বা দই খাওয়া উপকারী হতে পারে। তিনি বলেন, দিনের কোন একটা সময় দেড়শ থেকে দুইশ ml2 দই খাওয়া যেতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমঃ
রাত জেগে থাকাটা হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে বলে জানান পুষ্টিবিদরা। শারমিন আক্তার বলেন, রাতের বেলায় এমনিতেই পরিবেশে অক্সিজেন পরিমাণ কম থাকে। সেই সাথে রাতের বেলা ফুসফুসের বেশিরভাগ অংশ কাজ করে না। অর্থাৎ অব্যবহৃত থাকে। যার কারণে পুরোপুরি শ্বাস নেওয়া সম্ভব হয়না। আর জেগে থাকলে মানুষের সব ইন্দ্রিয় কাজ করে বলেই শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়, যা হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে হজমশক্তি বাড়াতে হলে বা একে বেশি কর্মক্ষম করতে হলে রাতে ঘুমানোটা বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
৫. শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামঃ
পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়া কতটা ভালোভাবে কাজ করবে তা অনেকটাই নির্ভর করে যে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ আছে কিনা তার ওপর। আর হজম বা শোষন প্রক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন এর বিকল্প নেই। সে কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটা জরুরি বলে মনে করেন এ পুষ্টিবিদ। তিনি বলেন, নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে।যাতে হজম সহজ হয়।স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন নানান কন্টেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।