Sunday, October 19, 2025
HomeLATEST NEWSহিন্দু জাতীয়তাবাদ কীভাবে ভারতের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠল?

হিন্দু জাতীয়তাবাদ কীভাবে ভারতের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠল?

হিন্দুত্ব: ভারতের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হবে পহেলা জুন। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশায় দিন গুনছেন নরেন্দ্র মোদি। যে কয়টি বিষয়ের ওপর মিস্টার মোদী এবং তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির জনপ্রিয়তা ভর করে আছে, তার অন্যতম হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শ বা হিন্দুত্ব। এই আদর্শের সমর্থক রা একটি হিন্দু ধর্ম তান্ত্রিক রাষ্ট্র চান। যেখানে হিন্দুদের চাওয়া-পাওয়া অগ্রাধিকার পাবে। সমালোচকরাই দৃষ্টিভঙ্গি টাকে বৈষম্যমূলক এবং পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য হুমকি বলে মনে করেন। মোদির শাসনামলে ঘৃনা এবং আক্রমন বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করে থাকেন অনেক মুসলিম। যদিও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কোন খারাপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সেটি স্বীকার করতেন নারাজ বিজেপি।

হিন্দুত্ব কী?

ধর্ম ও জাতীয়তাবাদকে এক করে দেখা হয় হিন্দুত্বে। মনে করা হয় সনাতন ধর্মীয় পরিচয় এবং ভারতীয় জাতীয় পরিচয় ওতোপ্রত ভাবে জড়িত।হিন্দু  শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ধর্ম কেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবর্তক চন্দ্রনাথ বসু।  1890 সালের দিকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের সংগ্রামের সময়টাতে ধারণাটি আলোচনায় আসে। তবে এটি জনপ্রিয়তা পায় আরো দুই দশক পরে উপনিবেশবিরোধী রাজনীতিবিদ বিনায়ক দামোদর সাভারকর এর হাত ধরে। সাভারকারকে হিন্দুত্ববাদী আদর্শের জনক হিসেবে দেখা হয়। 1922 সালে ব্রিটিশ কারাগারে বসে এসেন্টিয়ালস অফ হিন্দুত্ব নামে একটি পুস্তিকা লেখেন তিনি।

গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

সেখানে তিনি সিন্দু উপাত্যাকাকে তিনি সনাতন ধর্ম আইডেন্টিটির জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।নিজেকে নাস্তিক দাবি করলেও তিনি বিশ্বাস করতেন ওই অঞ্চলের সঙ্গে হিন্দুদের সংযুক্তা কেবল ধর্মের নয় বরং নৃতাত্ত্বিক। যার সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সংস্কৃতির পরিচয় জড়িয়ে আছে। ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে লিপ্ত অনেক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি হয়ে ওঠে সনাতন ধর্ম জাতীয়তাবাদ। এমনকি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও তার বক্তব্য সাধারণের কাছে সহজবোধ্য করে তুলতে ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করতেন। বিবিসি তথ্য জানান লন্ডন স্কুল অফ অরিয়েন্টাল আফ্রিকার সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট এর ডিরেক্টর অধ্যাপক সুবীর সিনহা।

কিন্তু গান্ধী ও সাভারকারের পথ ছিল ভিন্ন। অধ্যাপক সিনহা এবং আরো অনেক বিশ্লেষক মনে করেন সাভারকার সেই সময়ে বিকাশ লাভ করা ফ্যাসিবাদ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ছিলেন। মিষ্টার সিনহা বলেন হিন্দুত্বের শুরুর দিককার নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই মুসোলিনি ও হিটলারের প্রশংসা করতেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতি এই আকর্ষণের কারণ তারা কে জার্মান আর জার্মান নন তার একটা সংঙ্গা দাড় করিয়াছিলেন, বলছিলেন অধ্যাপক সুবীর সিনহা। 

ভারত কি একটি হিন্দু রাষ্ট্রঃ

2011 সালের শুমারি অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা 80 শতাংশ সনাতন ধর্ম,এবং 14 শতাংশ মুসলিম। এছাড়া খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার বাকি 6 শতাংশ সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে ভারতের সংবিধানে। জার্মানে রাষ্ট্রক্ষমতা কোন ধর্মের প্রতি আনুগত্য দেখাতে বাধ্য নয় এবং সকল ভারতীয় নাগরিকের নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু ধর্মের ভূমিকা ক্রমশ স্পর্শ কাতর হয়ে উঠছে। বিরোধীদের অভিযোগ মিস্টার মোদী এবং বিজেপির সনাতন ধর্ম  নীতি সেক্যুলারিজমের ভিত্তিটাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

যদিও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও লেখক শরৎ চাদহার মতো কোন কোন ভারতীয় মনে করেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণের প্রতি উপরের কাঠামোর সমর্থনের নীতি ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার যুক্তি প্রাচীন সনাতন ধর্ম রাজারা হাজার হাজার বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষতা চর্চা করে এসেছেন। সনাতন ধর্মকে রক্ষায় নিজেদের অঙ্গীকার এবং দায়িত্বশীলতা কে অবিচল রেখেই। তার ভাষায় এটাই সম্ভবত সেক্যুলারিজমের সবচেয়ে ভালো রূপ।

ক্ষমতাসীনদের সাথে হিন্দুত্বের সংযেগ কোথায়?

হিন্দু জাতীয়তাবাদ বিজেপির মূলনীতিগুলোর অন্যতম। দলটির শেকড়  জড়িয়ে আছে ব্রিটিশ শাসনের সময় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএস এর মত সনাতন ধর্ম পুনর্জাগরণের আন্দোলনগুলোতে। আরএসএস ডানপন্থী সনাতন ধর্ম জাতীয়তাবাদী সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা কেসব সবার ব্যাপকভাবে সাভারকারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে তিনবার নিষিদ্ধ করা হয় সংগঠনটিকে।

প্রথমবার 1948 সালে প্রাক্তন সদস্য নাথুরাম গডসের হাতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নিহত হওয়ার পর। তারপর আবার 1975 সালে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারি করেন। সে সময় প্রায় সব বিরোধী নেতা কে কারাবরণ করতে হয়েছে। আরএসএসকে তৃতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ করা হয় 1992 সালে। সে বছর কট্টর সনাতন ধর্ম সংগঠনগুলো ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠানে বাবড়ি মসজিদগুলো ভাঙ্গে। বর্তমানে আরএসএস কে বিজেপির আদর্শিক উৎস হিসেবে দেখা হয়। তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব দুটোই আছে তাদের।

আট বছর বয়স থেকে আরএসএস এর সাথে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দলটি হিন্দু জাতীয়তাবাদ কে জোরেশোরে সামনে নিয়ে আসতে শুরু করে। ওয়াশিংটন ডিসির কারণে কেন্দ্রের পরিচালক মিলন বৈষ্নব ব্যাখ্যা করে বলেন, অনেক দিক থেকেই মিস্টার মোদী হিন্দু জাতীয়তাবাদের একজন আদর্শ মুখপাত্র। কারণ তিনি সত্তিকারের ধর্ম বিশ্বাসী এবং আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

কি ঘটছে?

বিজেপির কোন কোন নীতি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে টানাপড়েন বাড়িয়েছে। 2019 সালে সরকার মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্ব শাসনের মর্যাদা বাতিল করে। দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সমতা আনার জন্য একটি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত অযোধ্যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের স্থানটিতে একটি সনাতন ধর্ম মন্দির উদ্বোধন করেছেন মিষ্টার মোদী। বিরোধীদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের কেউ কেউ নিয়মিতই জ্বালাময়ী ইসলামোফোবিক উপমা দিয়ে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন  এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি গত 21 এপ্রিল রাজস্থানে তার একটি নির্বাচনী জনসভায় ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

এরপর দুই দিনের দুটি পৃথক সভায় আবার ধর্মে প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। রাজস্থানের জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির বলেন যাদের বেশি বেশি ছেলেমেয়ে আছে বিরোধী কংগ্রেস তাদের মধ্যেই দেশের ধন-সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করে দিতে চায়। এসময় মুসলিম শব্দটি ব্যবহার না করে অনুপ্রবেশকারী বলে উল্লেখ করেন তিনি। যা নিয়ে সমালোচনার ও শিকার হন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মুসলিমদের উপর আক্রমনের খবর গণমাধ্যমে এসেছে এবং মুসলিমবিরোধী হেডস্পেইস বা বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তাও বেড়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া হিট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, 2023 সালে ভারতে প্রকাশ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ঘটনাগুলোর এক-তৃতীয়াংশই বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলো তে ঘটছে। নিয়মিত এমন কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments