বিশ্বে প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন নারীর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরুষরাও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইআরসির হিসেবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর 13 হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যান 6783 জন। নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে 19% স্তন ক্যান্সারে ভুগছেন। আর নারী পুরুষ মিলে 8.3%। চিকিৎসকদের মতে, যে কোন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
কীভাবে বুঝবেন আপনি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন কিনা?
ঝুঁকিগুলে হলোঃ
মায়ের দিকের নিকট আত্নীয়ের এই ক্যান্সার হলে, একজন নারীর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। বারো বছর বয়সের আগে পিরিওড শুরু হলে এবং 55 বছর বয়সের পরেও মেনোপজ না হলে অর্থাৎ দেরীতে মেনোপোজ হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপিঃ পোস্ট মেনোপোজ সিনড্রমের চিকিৎসা হিসেবে পাঁচ বছরের বেশি হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি যারা গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩০ বছরের বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, জিনগত মিউটেশনের কারনেও এই ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম না করা, ওবেসিটি, ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস গুলো স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। নারীদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকলেও, পুরুষরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এই ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব। এজন্য বাড়িতে বসেই নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। 20 বছর বয়স থেকেই নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একবার পিরিয়ড শেষ হবার সাথে সাথে পঞ্চম অথবা সপ্তম দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অথবা গোসলের সময় স্তন এবং বগলের নিচের অংশ পরীক্ষা করতে পারেন।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণঃ

স্তনের চারদিকে, বগলের ভেতরে বা আশেপাশে কোন স্থান ফুলে ওঠা কিংবা আলতো করে ছুয়ে দেখলে কোন শক্ত চাকার মত অনুভব হওয়া, স্তনের কোন অংশ ফুলে ব্যথা হওয়া বা স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা স্তনের চামড়া রংবাজ চেহারা পরিবর্তন হওয়া। দুটি স্তনের আকারে কোন পরিবর্তন হওয়া, স্তনের আশেপাশে লাল হয়ে যাওয়া, স্তন এর কোন অংশ যদি ভেতরের দিকে ঢুকে যায়, স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হওয়া, এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল
চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, বয়স হবার পর সব নারীর উচিত নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা।
যেসব পরিক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ঃ
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে মূলত তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ১.মেমোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্সর্রে সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পরে। ৪৪ বছর বয়স থেকে বছরে একবার ডিজিটাল মেমোগ্রাম করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকের।। মেমোগ্রামের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব। ২.সুনির্দিষ্ট নিয়মে চাকা বা পিন্ডু আছে কিনা চিকিৎসকের মাধ্যমে সেই পরীক্ষা করানোঃ নিজে নিজেই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা।
তবে স্তনের সমস্যা হওয়া মানে যেটা ক্যান্সার তা কিন্তু নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া উচিত, সেটা ক্যান্সার কিনা।
স্তন ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সিটি স্ক্যান, এমআরআই কিংবা বোন স্ক্যানিং করা হয়। এই ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন ক্যান্সার এর ধরন ও আকার। ক্যান্সার স্তন সীমাবদ্ধ রয়েছে নাকি অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চার ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা।
সার্জারিঃ
সার্জারির ক্ষেত্রে দু’ধরনের সার্জারি করা যেতে পারে।
১.লাম্পেকটোমিও
২. মাস্টেকটোমি।
৩.রেডিওথেরাপি,, ৪.কেমোথেরাপি,
৫. হরমোন থেরাপি।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরেকটি বড় বিষয় হলো মানসিক স্বাস্থ্য। এক্ষেত্রে অনেক সময় মনোবিজ্ঞানের পরামর্শ নিতে বলা হয়। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি সহ বিভিন্ন দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।
সেগুলো হলো,
১.অতিরিক্ত ওজন থাকলে সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে।
২.প্রতি সপ্তাহে 150 থেকে ৩০০ মিনিটের মতো ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি থাকতে হবে।
৩.অলস বসে থাকার মত অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, ৪.প্রতিদিন হাঁটা, ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তোলা খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
৫.স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
৬.ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে,
হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি সম্পর্কে দুবার ভাবুন। এর পার্শপ্রতিক্রিয়া কিভাবে, কতটা কমানো সম্ভব এসব বিষয় নিয়ে বারবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বড় কথা হল স্তন ক্যান্সার কোন স্টেজে বা পর্যায়ে আছে তার উপর নির্ভর করছে এটার চিকিৎসা ও নিরাময়। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক গুণ। আর সে কারণে শুরু থেকেই এ বিষয়ে সঙ্কোচ কাটিয়ে সচেতন থাকা খুবই প্রয়োজন।