Thursday, April 24, 2025
HomeLATEST NEWSআপনার শোবার ঘর কি জীবাণুর কারখানা হয়ে উঠেছে?

আপনার শোবার ঘর কি জীবাণুর কারখানা হয়ে উঠেছে?

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি/ঘর ফেরার পর সবারই ইচ্ছা হয় একটু বিশ্রাম করতে। কিন্তু আপনি যে কাপড়টা পড়ে আছে, যে তোয়ালে ব্যবহার করছেন, যে বিছানায় গা এলিয়ে দিচ্ছেন, সেগুলো কত বড় জীবাণুর কারখানা সেটাকি জানেন? আজ হাইজিন ও দৈনন্দিন পরিছন্নতা নিয়ে এমন কিছু জরুরী তথ্য জানাবো, যা জানলে অবাক তো হবেনই, তবে আশা করা যায়, এতে অনেকে সচেতন হয়ে যাবেন।

বিছানার চাদরঃ

বিছানার চাদর / শোবার ঘর

 আমাদের বিছানার চাদরে প্রতিনিয়ত আমাদের লালা, ঘাম, খুশকি, ত্বকের মৃতকোষ এমনকি খাদ্যকণা সংমিশ্রন লেগে থাকে।যা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস,এমনকি ছোট ছোট পোকামাকড় এবং চোখে দেখা যায় না এমন অনুজি বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। বিছানায় যেসব ব্যাকটেরিয়া আছে সেগুলো শরীরের কাটা ছেড়ার মধ্যে দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে ব্রণ বা ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। সেই সাথে অনেকে হাঁচি-কাশির, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ, ডায়রিয়া, ম্যানেনজাইটিসসহ গুরুতর সংক্রমনে ভুগতে পারেন।

শোবার ঘর কি জীবাণুর কারখানা

গ্লোবাল হেপেন খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল

আবার আমরা অনেকেই যখন ঘুমাযই তখন আমাদের শরীর থেকে 50 কোটি মৃত কোষ ঝরে যায়। মৃত কোষ গুলো অনেক ছোট ছোট পোকামাকড় বিশেষ করে ছারপোকা এবং খালি চোখে দেখা যায় না এমন অনু জীবের খাবার। তাই বিছানায় যদি এই মৃত কোষ দীর্ঘসময় থেকে যায়, তাহলে ছারপোকা অনুজীব হওয়ার স্বাভাবিক বিষয়। ছারপোকা সংস্পর্শে ত্বকে এলার্জি, এমনকি হাঁপানি  উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। এগুলো পোশাকের মতো নরম পৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

বিছানার চাদরের এসব রোগ জীবানু থেকে পরিত্রানের উপায় কি?

 বিছানার চাদরটা প্রতিদিন হওয়া সম্ভব নয়, এজন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো সপ্তাহে একবার গরম পানিতে সাবান দিয়ে ধোয়া। তবে আপনি যদি লম্বা সময় বিছানায় থাকেন, প্রচুর ঘামেন, বিছানায় খাবারের অভ্যাস থাকে, তাহলে সপ্তাহে দুই তিনবার দোয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আবার বিছানায় যদি ছোটশিশু শোয়,  তাহলে চাদর প্রতিনিয়ত তাদের মলমূত্র সংস্পর্শে, আসে বারবার বিছানা ওঠানামা করে ধুলোবালি হয়,তাহলে প্রতিদিন ধোয়াই ভালো। আবার আপনার যদি বিছানায় রাত ছাড়া খুব একটা ব্যবহার করা না হয়, তাহলে দুই সপ্তাহে একবার ধুলে হবে। তবে শর্ত দুটো, পানি গরম হতে হবে এবং সাবান ব্যবহার করতে হবে। ধোয়ার পর চাদর কড়া রোদে শুকাতে পারলে সবচেয়ে ভালো। কোন অবস্থাতেই আধা ভেজা চাদর পাতা যাবেনা। 

চাদর সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবার পরে তা ব্যবহার করুন। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমাবার আগে চাদর ভালোভাবে ছাড়তে হবে। এতে মৃতকোষ খাদ্যকণা এবং ছত্রাক ঝরে যাবে। বিছানা যে ঘরে আছে সেই ঘরে যেন আলো-বাতাস প্রবেশ করে। এতে ঘুমের সময় শরীর থেকে বিছানায় যে আদ্রতা জমে থাকে, তা শুকিয়ে যাবে।  বিছানায় তোশক বা মেট্রেসে আলাদা কভার ব্যবহার করলে ভালো। চাদগুলোর  সাথে কভারও ধোয়া যাবে।তোশক ও মেট্রেস নিয়মিত ব্যাকোম করুন, এতে ধুলো পরিষ্কার হবে। সে সাথে 2, 1 মাস পর পর এ মেট্রেস গুলো উল্টে দিন। একটি মেট্রেস 10 বছরের বেশি ব্যবহার হলে, তা বদলে ফেলাই ভালো। ছারপোকা যদি এরপরও তোশক বা মেট্রেস অবদি পৌঁছে যায়, তাহলে পেশাদারদের সহায়তা নিতে হবে।

তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে বিছানার চাদর ঘন ঘন হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারবেন। যেমন শরীরে নোংরা, ঘামার্থ বা মেকআপ  থাকা অবস্থায়  কখনোই বিছানায় যাবেন না। বাড়ি/ঘর ফেরার পর গোসল শেষে তবে বিছানায় যাবেন। শোবার আগে লোশন, ক্রীম এবং তেল এমন পরিমাণে ব্যবহার করবেন যেন সেটা ত্বক শুষে নেয়। চিটচিটে হয়ে থাকে সেটা বিছানার চাদর নষ্ট করবেন। এছাড়া টয়লেট ব্যবহারের পর, রান্নাঘরের কাজ শেষে  খেলাধুলা শেড়ে, বাগানের কাজ করে অর্থাৎ এমন কোন কাজ যা করে হাত নোংরা হয়, তাহলে অবশ্যই হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। বিছানায় ওঠার আগে পাওয়া ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ভালো হয় ঘরের স্যান্ডেল ব্যবহার করলে। তাহলে বারবার পা ধোয়ার ঝুঁকি  থাকবে না। অনেকে আবার নোংরা মোজা নিয়ে বিছানায় উঠে যায়।  এটা একদম করা যাবে না।

 আরো কয়েকটি বিষয়ে বেশ জরুরী সেটা হল বিছানায় খাওয়া দেওয়ার অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে। বাসায় পোষা প্রাণী, থাকে তাহলে তাকে এমন ভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে, যেন তারা বিছানায় না উঠে। এজন্য ভালো হয় আপনার বিছানার পাশে তাদের বিশ্রামের জায়গা দিয়ে রাখলে।

তোয়ালেঃ

শোবার ঘর

 এবার বলবো তোয়ালের কথা। যেটা কিনা দিনে অন্তত কয়েক বার ব্যবহার হয়। কিন্তু ধোয়া হয় খুব কম। অপরিষ্কার তোয়ালে থেকে ব্যাকটেরিয়াজনিত ও ছত্রাক জনিত বিভিন্ন রোগ যেমন মুখে ইনফেকশন ত্রাস, মূত্রনালীর সংক্রমণ, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি গনোরিয়ার মত রোগ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্যাকটেরিয়া সুতির কাপড়ের এক সপ্তাহ এবং তোয়ালে আশ তোলা টেরি কাপড়ে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। ছত্রাক এক মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কাপড় এবং টিস্যুতে 8 থেকে 12 ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে।

অন্যান্য ধরনের ভাইরাস 14 সপ্তাহ পর্যন্ত উল বা সুতি  কাপড়ে থাকতে পারে। যদি আপনি তোয়ালে একা ব্যবহার করেন, এক্ষেত্রে যতটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তার চাইতে কয়েকগুণ বেশি সতর্ক থাকতে হবে যদি একে তোয়ালে কয়েকজন ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর মতে, কখনো কখনো আমাদের শরীরে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, অনুজীব থাকতে পারে সেই মুহূর্তে আমাদের সংক্রমণ করে না। তবে তোয়ালের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় তা অন্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান একটাই তো আলাদা করে ফেলা।

শুধু তাই না একজন মানুষের ন্যুনতম দুটি তোয়ালে থাকা প্রয়োজন। শরীর মোছার জন্য একটি  এবং মুখ মোছার জন্য আরেকটি। এর কারণ আমরা শরীরের এমন সব জায়গায় তোয়ালে দিয়ে শুকাই, যেখানে সহজে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। সেখানে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, অনুজীব থাকতে পারে, যা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার মুখে সংক্রমিত হোক। আপনি যদি শরীর চর্চা করেন কিংবা এমনিতেই প্রচুর ঘামেন, তাহলে ঘাম  মোছার জন্য আলাদা তোয়ালে রাখবেন। এ ছাড়া রান্নার কাজও অন্যান্য কাজ শেষে হাত ধোয়ার পর তা মুছতে আলাদা তোয়ালে রাখাই ভাল।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তোয়ালে নিয়মিত না ধুলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য তোয়ালে সপ্তাহে একদিন হালকা গরম পানিতে সাবান দিয়ে ধুতে হবে এবং তোয়ালের সাথে অন্য কাপড় না ধেয়াই ভালো।  তবে আপনার যদি মুখে বা শরীরে ব্রণ বা প্রদাহ দেখা দেয়, তাহলে আপনার উচিত হবে তোয়ালে প্রতিদিন গরম পানি ও সাবান এ ধুয়ে ফেলা। ঘাম মোছার তোয়ালে প্রতিদিন ধুতে হবে। ধোয়া তোয়ালে অবশ্যই রোদে শুকাতে হবে। প্রতিবার  শুকনো তোয়ালে ব্যবহার করবেন, ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করবেন না একদমই।

অন্যান্য পোশাক আশাকঃ

 যে কাপড়টা সরাসরি আপনার শরীরের সংস্পর্শে থাকে, যেমন অন্তর্বাস, মোজা, ব্লাউজ  শরীরচর্চার কাপড় বা ঘামে ভেজা পোশাক, এগুলো একবার ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলবেন। শার্ট, টি- শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, টপস, শাড়ি  ৩,  ৪ বাট ব্যাবহারের পর ধুলেও চলবে। নির্ভর করবে আপনি কতটা ঘামেন, কতটা ধুলোবালির মধ্যে থাকেন, আপনার কোন চর্ম রোগ আছে কিনা তার ওপরে। সাধারণত জিঞ্জ ধেয়ার আগে চাইলে সেটা দশ থেকে বারো বার পর্যন্ত পড়া যায়। সুট  দুবার  বা তিনবার পড়ার পর ড্রাই পয়াশ করতে জবে। সোয়েটার বা গরম কাপড় চার-পাঁচবার পড়ার পর ধুলে হয়। এছাড়া জ্যাকেট প্রতি শীতের মৌসুমে একবার ড্রাই ওয়াশ করলেই হবে।। বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments