Sunday, October 12, 2025
HomeHEALTH & FITNESSঅ্যাপেনডিসাইটিস কী এবং কেন হয়? কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

অ্যাপেনডিসাইটিস কী এবং কেন হয়? কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

অ্যাপেনডিসাইটিস: যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এন এইচ এস এর তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপেনডিসাইটিস হচ্ছে অ্যাপেনডিস ফুলে যাওয়া এবং এর জের ধরে ব্যথা। অ্যাপেনডিসাইটিস হচ্ছে পাকস্থলীর যে অংশে মল তৈরি হয় অর্থাৎ মলাশয় এর সাথে যুক্ত ছোট থলির মতো একটি অংশ । সাধারণত পাঁচ থেকে দশ সেন্টিমিটার বা 2 থেকে 4 ইঞ্চি লম্বা হয় এটি। দেখতে অনেকটাই আঙুলের মতো। এই অ্যাপেন্ডিক্স এর কাজ কি তা এখনও জানা যায় না। তবে এটি সরিয়ে ফেলা হলে শরীরের তেমন কোন ক্ষতি হয়না।

অ্যাপেনডিসাইটিস কারণ কি?

এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়? তা এখনও জানা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে এপেনডিক্সের প্রবেশমুখটি বন্ধ হয়ে গেলে, এপেন্ডিসাইটিস হতে পারে বলে মনে করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মলের ছোট একটি টুকরা আটকে গিয়ে কিংবা শ্বাসনালীর ওপরের অংশে সংক্রমণের কারণে অন্ত্রের দেয়াল বা ভেতরের অংশের লসিকা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে এপেন্ডিসাইটিস ডেকে আনতে পারে।। এই আটকে যাওয়া বস্তুুতির কারণে প্রদাহ তৈরি হলে এবং ফুলে গেলে সেটি অ্যাপেনডিসাইটিস এর ওপরে চাপ তৈরি করে। যা পরবর্তীতে ফেটেও যেতে পারে। যেহেতু এপেন্ডিসাইটিস এর কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তাই এটি প্রতিরোধেরও তেমন কোনো উপায় জানা যায় না।

কারা আক্রান্ত হন?

এপেন্ডিসাইটিস একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা। ইংল্যান্ডে প্রতি বছর 50 হাজারের বেশি মানুষ এপেন্ডিসাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যেকোনো বয়সেই এপেন্ডিসাইটিস হতে পারে, তবে সাধারণত দশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সীদের মধ্যে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষণ কি?

এপেন্ডিসাইটিস সাধারণত পেটের ঠিক মাঝ বরাবর নাভির কাছে ব্যাথার মাধ্যমে শুরু হয় এবং এই ব্যথা আসে এবং যায়। অর্থাৎ বাড়তে কমতে থাকে। এক ঘন্টা ধরে এ অবস্থা চলতে পারে, এরপর ব্যথা আরো বাড়তে থাকে এবং একসময় বমিও হতে পারে। কয়েক ঘন্টা পর ব্যথা পেটের ডান দিকের নিচের অংশে নেমে আসে, এই অংশে সাধারনত অ্যাপেনডিসাইটিস থাকে। নিচের অংশে নেমে আসার পর ব্যাথাটা আর চলে যায় না এবং এর মাত্রা বাড়তে থাকে। এই অংশে চাপ দিলে কিংবা কাশি দিলে বা হাঁটাচলা করলে ব্যথা আরো বাড়তে থাকে। ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে, আপনি অসুস্থ বোধ করবেন এবং একইসাথে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এর তথ্য অনুযায়ী, যারা এপেন্ডিসাইটিস আক্রান্ত হন তাদের মাত্র অর্ধেক এর মধ্যে এসব লক্ষণ দেখা যায়। শিশু বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের উপসর্গ নাও থাকতে পারে। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের আরো যেসব উপসর্গ থাকতে পারে তা হচ্ছে,

জ্বরঃ

আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় 40 শতাংশের জ্বর থাকতে পারে। এর মানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

অস্থিরতাঃ

আপনি অসুস্থ বোধ করবেন এবং বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করবে না।

পেট ফুলে যাওয়াঃ

আপনার পেট বড় হয়ে গেছে বা ফুলে গেছে বলে মনে হতে পারে। এটি অ্যাপেনডিসাইটিস ফেটে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। আপনার মূত্রত্যাগের তারণা বেড়ে যেতে পারে।

অন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়াঃ

যখন আপনার দেহ রক্তপ্রবাহ অন্ত্র থেকে অ্যাপেনডিসাইটিস পাঠায়, তখন আপনার অন্ত্র সাময়িক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এর কারণে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং তারা বায়ু ত্যাগ করতে পারেন না। মনে হতে পারে যে মলত্যাগ করলে হয়তো আপনি আরাম বোধ করবেন।

ডায়রিয়াঃ

অনেকের অন্ত্র অতি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং বারবার মলত্যাগের তারণা হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?

যদি আপনার পেট ব্যথা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি আপনার ব্যথা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে এবং এটি পেতে ছড়িয়ে পড়ে কিংবা সাময়িকভাবে ব্যথা কমে সেটি আবার চরম আকার ধারণ করে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। ব্যাথা সাময়িক কমে গিয়ে যদি হঠাৎ করে অনেক বেশি বেড়ে যায়, তার মানে হতে পারে যে আপনার অ্যাপেনডিসাইটিস ফেটে গেছে এবং সেটা প্রাণঘাতী হতে পারে।

এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা কে অনেক সময় পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ জনিত রোগ বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস মারাত্মক ধরনের পেটের সমস্যা বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রনালীর সংক্রমণ বা পেলভিক ইনফেকশন এর মত রোগের সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারেন অনেকেই। নারীদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা কে নানা ধরনের স্ত্রীরোগ যেমন অস্বাভাবিক গর্ভধারণ বা ঋতুস্রাব কালীন ব্যথার সাথে মিলিয়ে ফেলা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যে কোন পেটব্যথা সেটি যদি সারাক্ষণ চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই তার জরুরী চিকিৎসা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অ্যাপেনডিসাইটিসের চিকিৎসা কিভাবে হয়?

আপনার যদি এপেন্ডিসাইটিস থাকে, তাহলে সম্ভবত যত দ্রুত সম্ভব সেটাই অপসারণ করা হবে অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি কেটে ফেলা হবে। অ্যাপেনডিস অপসারণ যা অ্যাপেন্দেক্টমি নামে পরিচিত সেটি বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ অস্ত্রপচার গুলোর মধ্যে একটি। এর সাফল্যের হার খুবই ভালো। সাধারণত ছোট একটি ছিদ্রের মাধ্যমে যা লেপ্রোচকপি নামে পরিচিত। তার মাধ্যমেই এ অস্ত্রোপচার করা হয়। যদি অ্যাপেনডিস ফেটে গিয়ে থাকে, তাহলে বড় অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর সেরে ওঠেন। তবে সেরে ওঠার পরবর্তী ছয় সপ্তাহ তাদেরকে ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে আমাদের সাথে রাখুন

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments